Archive for জুন 2014

বাইতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদরাসায় আমার দু'বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। আমি এখন বাইতুর রাসূল (সঃ) এর ফারেগ ছাত্র। এর আগেও আমি ফারেগ হয়েছিলাম, হাজারীবাগ দারুল উলুম মাদরাসা থেকে, সেখানে তখন তৃতীয় বর্ষ পর্যন্তই ছিল ! 



পরীক্ষা শেষে দুপুর বেলা যখন আখেরী মজমায় সবাই একত্রিত হল, আমাদের বর্ষের পাঁচ জনকে মাদানী হুজুর সকলের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে বললেন। পীর সাহেব কথা বললেন, আলামিন ভাই হিজবুল্লাহ ভাই আহসানুল্লাহ ভাইও কথা বললেন!
তারা বললেন নিজেদের কথা, আমাদের কথা, পঞ্চম বর্ষের কথা! আবেগ, ভালবাসা আর হৃদয়ের ব্যকুলতা নিয়ে তারা কথা বললেন, কাঁদলেন, কাঁদালেন, সকলের কাছে দোয়া চাইলেন, ক্ষমা চাইলেন... 

তারপর উসতাদগন কথা বললেন, নসীহত করলেন, দিক নির্দেশনা দিলেন। উস্তাদগন এই কাজটা সবসময়েই করেন, কিন্তু আমাদের অক্ষমতা... আমরা এগুলো ধারণ করতে পারিনা, মেনে চলতেও পারিনা...
ছুটির পর মাদানী হুজুর আমাদের কামরায় আসলেন, কিছু কথা বললেন, সকলের সাথে মুসাফাহ্‌ করলেন এবং...
এবং সকলের সাথে মুয়ানাকাহ্‌ করলেন!! এর আগে আমি কখনো কোন উস্তাদের সাথে বুক মিলাইনি,  এমনিতেই আমি সবসময় উস্তাদদের থেকে দূরে দূরে থাকি। কোন উস্তাদের সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গতাও তৈরি হয় নি। আমি জানি এটা মোটেও প্রশংসাযোগ্য নয়, কিন্তু এটাই আমার ‘তবিয়ত’।
মাদানী হুজুরের সাথে যখন কোলাকুলি করলাম তখন আমার ভিতরের অনুভূতিগুলো কেমন যেন জট পাকিয়ে গেল, আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আসলে কি হচ্ছে, আমি কি করছি, আমার কিই বা করা উচিত!
যখন আলিঙ্গনমুক্ত হলাম, তিনি অন্যান্য তালিবুল ইলমদের সাথে মুয়ানাকাহ করতে লাগলেন... তখন কেন জানি আমার বুকের ভিতরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম, কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখ দিয়ে যাকে বলে অঝোর ধারায় পানি পরতে লাগলো। আমি কাঁদলাম, কেন কাঁদলাম জানিনা, তবে সেদিন আমার কাঁদতে ভালো লেগেছিল... খুবই ভালো লেগেছিল !
রাতে বাকি সকল উস্তাদগনের সাথে দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল, মুসাফাহও হয়েছিল। দুপুরে সহপাঠী মাহমূদ চলে গিয়েছে তাই তার সাথেও মুসাফাহ মুয়ানাকাহ হয়েছিল।
অন্যান্য তালিবুল ইলমরা সকালে যাবে, আমি সকালে এসে সকলের সাথে মুসাফাহ করব এই বলে বাসায় ঘুমাতে আসলাম, কিন্তু পরের দিন সকালে আর মাদরাসায় যেতে পারিনি! কারো সাথে সাক্ষাতও হয়নি, রাফি ভাই,আলামিন ভাই এ.কে. খান! ভাই, মুহাম্মদ হুসাইন ভাই দুই দিনের জন্য মুন্সিবারি মসজিদে তাবলীগ জামাতের সাথে ছিলেন। তাদের সাথে দেখা হয়েছিল।
আজ শুক্রবার, আগামীকাল রাতের বাসেই ইনশাআল্লাহ আমি কুড়িগ্রাম চলে যাব, আম্মু-আব্বুর সাথে সারা রমজান সেখানেই কাটাব, ঈদের পর ফিরব। দোয়া করবেন যাতে ঈদের ছয় সাত দিন পরের টিকিট পেয়ে যাই !

তারপর ভর্তিপরিক্ষা দেয়ার জন্য ছোটাছোটি শুরু করব, প্রথমে যাবে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, সেখানে না হলে আমার ইচ্ছা হল লালবাগ মাদরাসায় যাওয়া, কারন সেটা মোটামোটি আমাদের বাসার কাছেই J । তবে নানা যায়গা থেকে লালবাগ ভর্তি হওয়ার ব্যপারে বাধা আসে, তাই অন্য কোথায়ও ভর্তি হয়ে যেতে পারি... আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করুন! আমীন। 

হিজবুল্লাহ ভাইয়ের দেশে ...

বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০১৪
লিখেছেনঃ Rabiul Islam
আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে মাদরাসার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। কিন্তু সমস্যা হল, পরীক্ষার যে পনেরো দিন খেয়ার দেয়া হল, এই পনেরো দিনে আমি পড়েছি মাত্র (হেদায়ার) দুই পৃষ্ঠা ! তাও আবার যেটা গত পরীক্ষায় চলে গেছে, এ পরীক্ষায় সে দুই পৃষ্ঠা থেকে প্রশ্ন আসার কোন সম্ভাবনাই নাই !


যাই হোক, এতদিন পরীক্ষা নিয়া মাথা ঘামাই নাই, "সো" এখন ঘামানোর কোন মানেই হয় না।

আজ হঠাৎ হিজবুল্লাহ সালেম ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল, আমরা এক সাথেই পড়ি। তবে আমাকে আমার দরসের তালিবুল ইলমরা বাদে অন্যকেও না চিনলেও হিজবুল্লাহ ভাইকে কিন্তু সম্পুর্ন মাদরাসা চিনে।
সকল তালিবুল ইলম, সকল ওস্তাদ তাকে চিনে, আমাদের এলাকায় যত মানুষ এই মাদরাসার কথা জানে (আমার ধারণা) তার চেয়ে বেশি মানুষ হিযবুল্লাহ ভাইকে চিনে!
একদিন রাস্তা দিয়ে হাটছি, হঠাৎ এক মহিলা জিজ্ঞাসা করল, এই তুমি কোন মাদরাসায় পড় ? আমি একটু 'থতমত' খেয়ে বললামঃ ঐ দিকে"বাইতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" মাদরাসায়। তিনি বললেনঃ হিজবুল্লাহ যে মাদরাসায় পড়ে সেটাতে ? আমি বললামঃ জি। সেটাতেই !!!

অবশ্য ব্যপারটার 'রিভার্স' সাইট ও আছে। আমার ধারণা বাংলাদেশের এমন কোন জেলা নাই যেখানে এমন মাদরাসা আছে যেটার কমপক্ষে দুইজন ওস্তাদকে হিজবুল্লাহ ভাই চিনে না। (মনে হতে পারে আমি অতিরঞ্জিত করছি, তবে এটাই বাস্তব)। অমুক জায়গায় নাকি একটা মাদরাসায় আছে, নাম শুনেছেন ? হ্যা, মাওলানা অমুক সাহেব তো সেখানের ওস্তাদ, আমার সংগে ভালো খাতির!!
অপরিচিত মাওলানা অমুক সাহেব সম্পর্কে জানেন কিছু ? আরে হ্যা, তার ছেলেতো ঐ মাদরাসায় পড়ে, আমার বন্ধু !!
প্রতিটি কথাতেই হিজবুল্লাহ ভাইয়ের এরকম উত্তর পাওয়া জায়। তবে তিনি কিন্তু সব সত্য কথাই বলেন।

আমাদের মাদরাসার প্রতিটি প্রয়োজনে সর্বপ্রথম ডাক পড়ে হিজবুল্লাহ ভাইয়ের। পাহাড়পুরী হুজুর এসেছেন, হিজবুল্লাহ ভাইকে ডাকো। আদীব সাহেব হুজুর এসেছেন, হিজবুল্লাহ ভাই কোথায় ? আগামী মাসে মাহফিল, হিজবুল্লাকে ডাকোতো।
এমনকি বাবুর্চি যদি কোন কারণে অনুপস্থিত থাকে তাহলেও মাতবাখে ডাক পড়ে হিজবুল্লাহ ভাইয়ের।

হিযবুল্লাহ ভাইয়ের অনেকগুলো গুনের মধ্যে আরেকটা গুন হল, কিভাবে কিভাবে যেন তিনি সব খবর আগেই পেয়ে যান! হঠাৎ করে ঘোষণা দিয়ে বসেন, অমুক দিন অমুক মাদরাসায় খতমে বুখারী। ওমুক দিন ওমুক খানে ওয়াজ মাহফিল, অমুক সাহেব আসবেন। অমুক দিন অমুক মসজিদে তারাবির ইন্টারভিউ, অমুক দিন মাদরাসায় অমুক হুজুর আসবেন ইত্যাদি ।
তার এই অগ্রিম সংবাদ দানের কারনএ আমাদের জামাতের ছাত্ররা তার নাম রেখেছেন "দৈনিক হিজবুল্লাহ, সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ"!

আমাদের মাদারাসায় যারা নতুন আসে, তাদের নব্বই শতাংশই সর্বপ্রথম পরিচিত হয় হিজবুল্লাহ ভাইয়ের সাথে। এমনকি আমি যখন দারুল উলুম পড়তাম তখনও বাইতুর রাসূল (সাঃ)এর মাত্র একজন ছাত্রকেই চিনতাম, হিজবুল্লাহ !

সময় বেশি নেই, এখন গোসল করতে যাব, পীর সাহেবের (আরে, আমাদের মাহফুজ মুশতারি{!!!} ভাই) সেই কথাটা মনে পড়ল, তিনি একদিন আমাকে বলছেন। রবিউল ভাই! ভবিষ্যতে যদি কোন দিন দেওবন্দ, করাচি বা অন্য কোন দেশে পড়তে যাই তাহলেতো বড় আশংকা হয়! জিজ্ঞাস করলাম কিসের আশংকা? তিনি বললেন, সেখানের মানুষরাতো আমাকে জিজ্ঞাসা করবে আমি কোন দেশ থেকে এসেছি, আমি বলব বাংলাদেশ থেকে, তখন তারা একটু অবাক হয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে বলবে, ও আচ্ছা আচ্ছা! আপনি হিজবুল্লাহ ভাইয়ের দেশ থেকে এসেছেন... !! ??

হিজবুল্লাহ ভাই মাদরাসার সকল প্রয়োজনে যেভাবে এগিয়ে আসেন, আল্লাহ তায়ালা ইসলামের সকল প্রয়োজনে আপনাকে সেভাবেই অগ্রসর করে রাখুন। আমীন।

হিজবুল্লাহ ভাইকে নিয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম, ব্লগে লেখার কিছু পাইনা তাই... :) আর আমার দরসের কোন তালিবুল ইলম যদি এই লেখাটা (ভুলে) পড়ে ফেলেন তাহলে কিন্তু মাইন্ড খাইয়েন না :P 
আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

কিছু লেখা

Copyright © রবিউল ইসলাম - Powered by Blogger